বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিষয়ে সম্প্রতি সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট (এসআইআর) প্রকাশ করেছে সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফট। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিবার্ষিক এ প্রতিবেদনে অত্যন্ত দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাম উঠে এসেছে। খবর টেকওয়্যার এশিয়া।
মাইক্রোসফটের তথ্যমতে, সাইবার হামলা ঠেকাতে শতভাগ সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব নয়। কারণ সাইবার অপরাধীরা নিয়মিত তাদের হামলার ধরন পরিবর্তন করছে। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রকৃত অপারেটিং সিস্টেম ও প্রকৃত অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ক্ষতিকর সফটওয়্যার ছড়িয়ে পরিচালিত সাইবার আক্রমণের অত্যন্ত ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পর এ ধরনের হামলার ঝুঁকিতে আছে কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে এ দেশগুলোর মাইক্রোসফট রিয়েল-টাইম নিরাপত্তা পণ্য ব্যবহার করছে, এমন প্রতি চারটি কম্পিউটারের একটিতে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি কোম্পানি এসকিউআর সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিথিন থমাস বলেন, বিশ্বব্যাপী একযোগে সাইবার আক্রমণ চালাতে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। এ ধরনের ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে সাধারণত বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হাতিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ ফেরত দিতে মুক্তিপণ আদায় ও হাতিয়ে নেয়া বিপুলসংখ্যক তথ্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
মাইক্রোসফটের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বা ইন্টারনেট সংযুক্ত প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। সাইবার আক্রমণের হাত থেকে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে সুরক্ষা প্রদান দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
মাইক্রোসফট সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী গড়ে ৯ শতাংশ কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করেছে।
জাপান সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে সবচেয়ে কম সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। জাপানে মাইক্রোসফটের রিয়েল-টাইম নিরাপত্তা পণ্য ব্যবহারকারী ২ শতাংশ কম্পিউটারে ক্ষতিকর সফটওয়্যার শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মালওয়েশিয়ায় প্রায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ইতিবাচক দিক হলো, ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মালওয়েশিয়ায় ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে সাইবার দুর্ঘটনা কমে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার ছড়ানো এতটাই বেড়েছে যে, শতভাগ সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্লাউড কম্পিউটিং এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যন্ত সহায়ক প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ক্লাউডভিত্তিক সেবা ঘিরেও সাইবার আক্রমণের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে।
র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধীদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করা না হলে কম্পিউটার সিস্টেম অকার্যকর করে দেয়া হচ্ছে। চলতি বছর সংঘটিত ‘ওয়ানাক্রাই’ ও ‘নটপেটয়্যা’ র্যানসমওয়্যার হামলায় বিশ্বের বহু দেশের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।