এবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যলায়েন্সের (এনসিএসএ) ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস ২০১৭’-কার্যক্রমের অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনলাইন নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানে যুক্ত হলো তারা। এ কার্যক্রমের অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস ২০১৭ এর কার্যক্রমে পাঁচটি পৃথক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
প্রথম সপ্তাহ : (২-৬অক্টোবর)
Stop! Think! Connect! বা থামুন! ভাবুন! যুক্ত হোন!: এটি অনলাইন নিরাপত্তার সহজ পদক্ষেপ। এই বিষয়টি অনুসরণ করা প্রত্যেকের জন্য সহজ ও কার্যকর পরামর্শ। ইন্টারনেটে কোনো কিছুতে যুক্ত হবার আগে থামুন এবং আপনার অবস্থানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। এরপর ভাবুন অনলাইনে আপনার কর্মকান্ড এবং আচরণের পরিণতি সম্পর্কে এবং শেষে যুক্ত হোন।
ইন্টারনেটে নিরাপদ ও নিশ্চিতে থাকার বিষয়টি আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। যে কারো পক্ষে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং এর ক্রমাগত দিকগুলো শেখা এবং সাইবার নিরাপত্তার অভ্যাস অনুশীলন করা কঠিন। নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনাকে আপনার হোম নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল ডিভাইসগুলি সুরক্ষিত রাখতে হবে। ইন্টারনেটকে আরও নিরাপদে, নিশ্চিতে এবং দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করতে শিখতে হবে।
প্রথম সপ্তাহে, ব্যবহারকারীদের সাইবার হামলার ক্ষতির বিষয়গুলো জানাতে হবে। একইসঙ্গে সাইবার হামলা থেকে রক্ষার পদক্ষেপ এবং সাইবার হামলার শিকার হলে কী করতে হবে তা জানাতে হবে।
দ্বিতীয় সপ্তাহ: (৯-১৩ অক্টোবর)
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে সাইবার নিরাপত্তা: আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থল যেখানেই হোক না কেন- বড় কিংবা ছোট, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি সংস্থা- সবখানে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করা অপরিহার্য যেখানে কর্মস্থলের সবার মধ্যে একটি যৌথ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের- প্রশিক্ষণ, সচেতনতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সাইবার হামলা প্রতিরোধের জন্য পরিকল্পনা প্রয়োাজন।
দ্বিতীয় সপ্তাহ আমাদের দেখাবে, কিভাবে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান নিজেদের, তাদের কর্মচারী এবং গ্রাহকদের সাধারণ সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারে। এ সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাইবার সচেতনতা জোরদার করতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় সপ্তাহ: (১৬-২০অক্টোবর)
আগামীর ইন্টারনেটের জন্য আজকের পূর্বাভাস: ইন্টারনেট প্রযুক্তির চোখ দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে নজর রাখতে হবে এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার কৌশলগুলি চিহ্নিত করতে হবে। বিষয়টি বেশ কঠিন। তারপরেও প্রযুক্তির আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাইবার জগতের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রত্যেকের ভূমিকা রাখতে হবে।
আধুনিক শহর, সংযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ডিভাইস, ডিজিটাল রেকর্ড এবং আধুনিক গাড়ি-বাড়ি আমাদের নতুন বাস্ততায় পরিণত হচ্ছে। তৃতীয় সপ্তাহ আপনাকে আরো স্মরণ করিয়ে দেবে যে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো স্মার্ট ডিভাইসগুলির চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করে। ইন্টারনেটের আন্তঃসংযোগ বিপুল সুবিধা থাকলেও এটি বোঝা বেশ কঠিন যে, কিভাবে প্রযুক্তিগুলো ভালোভাবে এবং নিরাপদে ব্যবহার করা যায়।
চতুর্থ সপ্তাহ: (২৩-২৭ অক্টোবর)
সাইবার সিকিউরিটিতে ক্যারিয়ার গড়ুন: আপনার কাছে ইন্টারনেটের প্রত্যাশা: আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা। আমাদের বিস্তৃত এ নেটওয়ার্ক রক্ষা করার জন্য পেশাদার সাইবার নিরাপত্তা প্রকৌশলীর বেশ অভাব রয়েছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সাইবার বিষয়ে দক্ষ করার পাশাপাশি তাদের কাজে লাগাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর সাইবার সেফটি অ্যান্ড এডুকেশনের এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন তথ্য নিরাপত্তাকর্মীর অভাব থাকবে।
একটি কার্যকরী ও ফলপ্রসূ পেশা হিসেবে সাইবার নিরাপত্তাকে বেছে নিতে চতুর্থ সপ্তাহের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে। মা-বাবা, শিক্ষক, অভিভাবক এবং রাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান এই বিষয়ে আরও জানবেন এবং সাইবার নিরাপত্তা পেশায় যুবকদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে সচেষ্ট হবেন।
পঞ্চম সপ্তাহ :(৩০-৩১ অক্টোবর)
সাইবার হুমকি থেকে অবকাঠামো রক্ষা: আমাদের গণসেবামূলক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো- যেমন: বিদ্যুৎ, অর্থনীতি, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদির জন্য আমরা ইন্টারনেটের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল হচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ এসব অবকাঠামোর স্থিতিশীলতা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চম সপ্তাহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সচেতন করবে।
এ বছর বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সেমিনার, কর্মশালা, ক্যাম্পেইন ইত্যাদির আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিকদের জন্য এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা আয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব। এজন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগের ঠিকানা: [email protected]
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে:
সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ২০১৫ সালে সামাজিক উদ্যোগ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। এর পর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য সাইবার অপরাধ সচেতনতা ও অনুসন্ধান বিষয়ক কর্মশালা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস পালন করার উদ্যোগ নেয় সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।