দেশে সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০.৫২%, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩.৭১%, ৩০ থেকে ৪৫ বছর ১২.৭৭% এবং ৪৫ বছরের বেশী ৩%। কিন্তু প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব এবং লোকলজ্জা ও ভয়-ভীতির কারণে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে সাইবার অপরাধ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সহযোগিতায় ছিল প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইজ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা প্রযুক্তিবিদ একেএম নজরুল হায়দার। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেক্ট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের (সিসিএ) নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম সচিব) আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। সঞ্চালক ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, লিঙ্গ ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের ৫১.১৩ শতাংশ নারী এবং ৪৮.৮৭ শতাংশ পুরুষ।
অপরাধের ধরণ ব্যাখায় ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ বাংলাদেশের নারীরা। গড়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪.২৯ শতাংশ নারী। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২.৭৮ শতাংশ পুরুষ। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিং/ তথ্য চুরির শিকার নারী- পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুনের চেয়ে বেশি।
এক্ষেত্রে ১৩.৫৩ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও নারী আক্রান্তের হার ৫.২৬ শতাংশ। অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী-পুরুষের এই অনুপাত অনেকটাই বিপ্রতীপ বলা চলে। এই অপরাধে আক্রান্ত নারীর হার ১২.০৩% হলেও পুরুষের বেলায় তা ৩.৭৬%। অনলাইনে হুমকিমূলক বার্তা প্রাপ্তির হার নারী ৯.৭৭% এবং পুরুষ ভুক্তভোগী ৩.৭৬%।
তবে হয়রানির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের ৩০ শতাংশই এর বিরুদ্ধে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সে বিষয়ে জানেন না। বাকীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না ভেবে অভিযোগ করেন না।
যুগ্ম সচিব আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক জরিপে উঠে এসেছে, নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীরা সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন বেশি। আমরা ইতোমধ্যে ১০০টি স্কুলে সচেতনতামূলক বই বিতরণ করেছি। এই বই শুধু ছাত্রীদের জন্যই নেয়, তাদের বাবা-মা, ভাইদের পড়ার জন্যও।’ তিনি বলেন, ‘যদি সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়, তাহলে ৫০ শতাংশ অপরাধ এমনিতেই কমে আসবে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ৯৯৯ জরুরি সেবা ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন তো আছেই।’
একেএম নজরুল হায়দার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে যতো প্রবেশ করব ততোই ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এজন্য সচেতনতা জোরদার করতে হবে।
রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম বন্ধে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আগে যে সম্পর্ক কিংবা লেনদেন ৬ মাসে হতো, ডিজিটাল অনলাইনের যুগে এখন একঘণ্টায় হয়। অল্প সময়ে অনেকে কিছু চিন্তা-ভাবনা না করেই অনেক কথা বলে ফেলেন। এরপরই তারা সাইবার হামলার শিকার হন।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ সাইবার অপরাধ ফেসবুককেন্দ্রিক। আইসিটি বিভাগকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে, যেন কেউ হামলার শিকার হলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।’
নিচের লিংক থেকে গবেষণা প্রতিবেদনটি ডাউনলোড করুন